শনিবার, ২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
কক্সবাজার সদর

কক্সবাজারে আশ্রয়কেন্দ্রে ৩২ হাজার মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে রক্ষা পেতে শনিবার (১৩ মে) সকাল ৮টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩২ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান।

জেলা প্রশাসক বলেন, সকাল থেকে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খুলে দিয়েছি। উপকূলের মানুষ আসতে শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত ৩২ হাজার মানুষ এসেছেন। আরও অনেকেই আসবেন। তবে কত লোক আসবে সেটা ঠিক বলা যাচ্ছে না।

এর আগে, গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে থেমে থেমে রাত ১টা পর্যন্ত চলে। আজ শনিবার সকাল থেকে মোখার প্রভাবে আবারও থেমে থেমে বৃষ্টি ও ধমকা হাওয়া চলছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া আনোয়ারার বলেন, আমাদের ঘরগুলো সাগরতীরে। যেকোনো সময় ডুবে যেতে পারে। তাই প্রাণ বাঁচাতে আগে থেকেই চলে এসেছি। আল্লাহ জানে এই ঘূর্ণিঝড়ের পরিণতি কী হয়। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুক।

সালেহা আকতার নামে সাগরতীরের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার স্বামী পঙ্গু। তাই আগে থেকে চলে আসলাম। ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে তাকে নিয়ে কই যাব। সে তো চলাফেরাও করতে পারে না। টেলিভিশন ও এলাকায় মাইকিং করে বলা হচ্ছিল আজ সন্ধ্যা থেকে ঘূর্ণিঝড় শুরু হতে পারে। তাই সব কিছু নিয়ে ডিসি স্যারের কার্যালয়ে চলে আসলাম।’

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান বলেন, রোববার (১৪ মে) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। এ সময় ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে।

dhakapost

তিনি আরও বলেন, সেন্টমার্টিনের দুই দিক থেকে যেহেতু খোলা রয়েছে এবং পানি চলাচলের সুবিধা আছে, তাই বড় ধরনের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ওই অঞ্চলে পানি জমে থাকবে না। আবহাওয়া অফিস থেকে প্রতি মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় মোখার সকল আপডেট জানিয়ে দেওয়া হবে।

সেনাবাহিনীর পক্ষে মেজর ফাহাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় আমাদের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। জরুরি মুহূর্তে আমরা ওষুধ সরবরাহ থেকে শুরু করে যাতায়াত ব্যবস্থা এবং প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবো। এ সংক্রান্ত যোগাযোগ সেল খোলা হয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি থানায় আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। দুর্যোগকালীন প্রতিটি মানুষকে সহযোগিতা করা হবে। লোকজনকে সহযোগিতার মাধ্যমে মানবিকতার পরিচয় দিতে হবে।

এদিকে, জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় সিসিপির ৮ হাজার ৬০০ জন এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ২ হাজার ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। সেন্টমার্টিনে নেভি, কোস্টগার্ড, পুলিশসহ ৩৭টি সরকারি স্থাপনা রয়েছে। তাই সেখানে সরকারি স্থাপনাগুলো সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য ২০ লাখ নগদ টাকা রাখা হয়েছে, যার মধ্যে ১০ লাখ টাকা উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।

একইসঙ্গে ৫ দশমিক ৯০ মেট্রিক টন চাল, ৩ দশমিক ৫ মেট্রিক টন টোস্ট বিস্কুট, ৩ দশমিক ৪ মেট্রিক টন শুকনা কেক, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন, ২০ হাজার প্যাকেট ওরস্যালাইন ও ৪০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র। জেলায় যে ৫৭৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেগুলোতে ৫ লাখ ৫ হাজার ৯৯০ জন মানুষ থাকতে পারবে। আজ শনিবার সকাল থেকে মেডিকেল দল, কোস্টগার্ড, নৌ-বাহিনী, পুলিশ, নৌ-পুলিশ, জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক দল, স্কাউট দল, আনসার বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *