তাজুল ইসলাম পলাশ
জেলায় আগাম জাতের রোপা আমন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। পাকা ধানের সোনালি শীষে ভরে গেছে ফসলের মাঠ। ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। সোনালি ধান হাসি ফুটিয়েছে তাদের মুখে।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গেলো বন্যায় রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতি থাকতে পারেন। তবে ফলন ভালো হওয়ার কারনে ফলন বাড়তে পারে বলেও তাঁদের ধারণা। তারা বলছেন, উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছে। এর ফলে একই জমিতে তিনটি ফসল আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হবে কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আমন ধানের সোনালি রং-এ সেজেছে কৃষকের ফসলি মাঠ। যতদূর চোখ যায় শুধু পাকা ধানের সোনালি রুপ। চারিদিকে সোনালি ফসলের সমারোহ। সোনালি শীষে হাতে ধরা দিয়েছে কৃষকের স্বপ্ন। কৃষকের পাশাপাশি শ্রমজীবীরা ধান কাটা ও মাড়াই করে ঘরে তোলার ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছেন, জেলায় চলতি আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৭৮ হাজার ৭৩০ হেক্টর। গত বছর ৭৮ হাজার ৯৩০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও উৎপাদন হয়েছিল ৭৮ হাজার ৮৪৫ হেক্টর। এরমধ্যে হাইব্রিড ১২ উফশী ৩৪ এবং দেশীয় তিন জাতেরসহ ৪০-৪২ জাতের আবাদ হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কম সময়ে ফলন এবং কম খরচে এই নতুন জাতের ধান চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কক্সবাজারের অনেক কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. বিমল কুমার প্রামাণিক জানান, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ কিছুটা কম হয়েছে। গেলো বন্যার কারনে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আশানুরূপ ফলন আশা করছি।
কৃষকরা জানিয়েছেন, এ বছর ফলন তুলনামূলক ফসল ভালো হয়েছে। মনপ্রতি ১৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হওয়ার আশা। তবে এ বছর বন্যায় নিচু এলাকার আমন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও উঁচু এলাকায় ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় খুশি কৃষকেরা। আগাম জাতের ধান কেটে এই জমিতেই বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা, আলুসহ শীতকালীন সবজি আবাদ করতে পারবেন তারা। তাই প্রতিবছরই জেলায় বৃদ্ধি পাচ্ছে আগাম জাতের রোপা আমন ধানের চাষ।
চৌফলদন্ডি ইউনিয়নের কৃষক মোহাম্মদ রহিম উদ্দিন ২ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান লাগিয়েছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তিনি ধান কাটা শুরু করবেন জানান।
খরুলিয়া ৫ নং ওয়ার্ডের কৃষক এয়াকুব আলী বলেন, বৃষ্টির কারনে জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। ফলে ধানের চেয়ে চিটা বেশি হয়েছে। ধানের দাম ভালো থাকায় ক্ষতিটা পুষিয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ বছর ধানে রোগ ও পোকার আক্রমণ একবারেই ছিল না। পাশাপাশি কৃষক পর্যায়ে সারের সরবরাহ ভালো থাকায় কৃষকরা সুষম পরিমাণে জমিতে সার ব্যবহার করতে পেরেছেন। যে কারণে ফলন ভালো হয়েছে।
যদি-ও বন্যার কারনে আবাদ কম হলেও ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার খুব কাছাকাছি পৌঁছানো যাবে।
বিমল কুমার প্রামাণিক বলেন, জেলায় এ বছর ৭৮ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বন্যার কারনে কৃষকের প্রায় প্রায় ৪০ হেক্টর ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যায়। যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩০ হাজার কৃষক। কিন্তু, ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। উখিয়া, চকরিয়া ও রামুসহ কয়েকটি এলাকায় ৬ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত বছর গড়ে চাল’এ হেক্টর প্রতি তিন দশমিক ০.৫ মেট্রিক টন সংগ্রহ হয়েছিল। কিন্তু এ বছর হেক্টর প্রতি গড়ে তিন দশমিক ৫ মেট্রিক টন ফলন হচ্ছে। এটা কিন্তু অনেক বড় একটি বিষয়।