টেকনাফে ২৫দিনেই ১২শ ছাড়িয়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা, উচ্চ ঝুঁকিতে পৌর এলাকা
খাঁন মাহমুদ আইউব
কক্সবাজারের টেকনাফে ভয়ংকর ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। ইতোমধ্যেই পৌর শহরকে ডেঙ্গু ঝুঁকি পূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। মশা নিধন ও ডেঙ্গু রোধে পৌরসভার পক্ষ থেকে কোন কার্যক্রম নেই বলে দাবী পৌর বাসীর। জরুরি পদক্ষেপ না নিলে পৌর এলাকায় ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করতে পারে বলে অভিমত চিকিৎসকদের।
টেকনাফ উপজেলা হাসপাতালের তথ্য মতে, গেলো জুন মাসের ১২ তারিখ প্রথম টেকনাফ পৌরসভার এক ব্যক্তির শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস সনাক্ত হয়। ওই মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত সনাক্ত হয় ৭৯ জন, জুলাই মাসে ৮৫৩ জন, চলতি আগষ্ট মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত ১২৭৬ জন রোগী সনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশ রোগী টেকনাফ পৌর এলাকার। প্রতিদিন হাসপাতালে ১৪-১৫ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। এদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। এই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষায়িত ৩টি ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। অধিকাংশ রোগী চিকিৎসা নেয়ার পরে বাড়িতেই চিকিৎস্যা চালিয়ে যাচ্ছেন।
টেকনাফ উপজেলায় হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ও রোগ নিয়ন্ত্রক ডাক্তার প্রণয় রুদ্র জানান, প্রতিদিন মোট ডেঙ্গু রোগীর অর্ধেক হাসপাতালের আউটডোরে এসে চিকিৎসার নিলেও মূলত প্রাইভেট চেম্বার গুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছে আরো অর্ধেকের বেশী রোগী। সে ক্ষেত্রে সরকারী পরিসংখ্যানের সাথে যোগ হয়ে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুন হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের লোকজন প্রতিদিন টেকনাফ শহরে আসা যাওয়া করে। এখান থেকেই ডেঙ্গু ছড়ানোর ঝঁকি বেশী। তাই আগে পৌর শহরকে ডেঙ্গু মুক্ত করা দরকার।
পৌর বাসীর অভিযোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠলেও টেকনাফ পৌর সভার পক্ষ থেকে মশা নিধন ও রোগ নিয়ন্ত্রনের কোন কার্যক্রম নেই।
পৌরসভার কায়ুকখালী পাড়ার বাসিন্দা রনি জানান, গেলো বছরের শেষ দিকে ফগার মেশিন দিয়ে মশা নিধনের ঔষুধ ছিটিয়ে যাওয়ার পর এই পর্যন্ত আর কারো দেখা নেই।
একই ভাবে অলিয়াবাদ এলাকার রাকিব জানান, ডেঙ্গু থেকে সুস্থ হয়ে উঠার পর ফের আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে আছি। বিকেলের পর থেকেই যেভাবে মশার উপদ্রব শুরু হয় ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে রাখলেও নিস্তার পাওয়া যায়না।
গিয়াস উদ্দীন নামের এক স্থানীয় সংবাদকর্মী জানান, পৌর শহরের রাস্তার ধারে, দোকানের পাশে জমে থাকা ময়লা আবর্জনা তিন চারদিনেও সরিয়ে নেয়া হয়না, সুতরাং এতে মশার বিস্তার ঘটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
ইসলামাবাদ এলাকার মনু জানান, পরিবারের তিনজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলো। এখন বাচ্চাটাও আক্রান্ত হলো। কিছু মানুষ মরার পরে হয়তো পৌরসভা মশা নিধন শুরু করবে।
উপজেলা ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ইরফানুল হক ‘বার্তা বাজার’কে বলেন- ডেঙ্গু প্রতিরোধ এবং সচেতনার বৃদ্ধি করতে উপজেলা হাসপাতাল ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটি’র পক্ষ থেকে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পৌর মেয়রের সাথে কথা হয়েছে।
এই বিষয়ে টেকনাফ পৌর মেয়র হাজী ইসলাম ‘বার্তা বাজার’কে জানান, মশা নির্মূলের জন্য প্রতিদিন বিকেলে ঔষুধ ছিটানো হচ্ছে। তবে বর্ষাকালে ঔষুদের কার্যকারীতা তেমন একটা থাকেনা। তাই মশা বেড়ে যাচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীল ‘বার্তা বাজার’কে জানান, উপজেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দিন দিন ভয়ংকর হারে বাড়ছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ রোগী পৌর এলাকার। তাই পৌর এলাকাকে ডেঙ্গুর অতি ঝুকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু নির্মূলে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি করোনার মতো মহামারী আকার ধারণ করতে পারে।