নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে ভাবছে প্রশাসন
মো. নজরুল ইসলাম (টিটু), বান্দরবান
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে বসবাসকারী স্থানীয়দের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। তাই সেখান থেকে ৩০০ পরিবারের প্রায় দেড় হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই তাদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধির সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপকালে এসব কথা জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা ফেরদৌস।
ইউএনও বলেন, ‘তুমব্রু সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গারা যেহেতু শূন্যরেখায় থাকে, তাই তাদের ব্যাপারে এখনো কোনও চিন্তাভাবনা করছি না আমরা। তবে ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে জেলা প্রশাসন। কীভাবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আজ আলাপ হয়েছে। তাদের মতামতের ওপর বিষয়টি নির্ভর করছে।
আজকের সভায় স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে জানিয়ে উপজেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা বলেন, চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা তাৎক্ষণিক কোনও সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। তাই তাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছি আমরা। তারা সিদ্ধান্ত দিলেই ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো আমরা।’
এর আগে রবিবার বেলা ১১টায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঘুমধুম ও সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নিয়ে সভা করেন ইউএনও সালমা ফেরদৌস। সভায় সীমান্ত পরিস্থিতি ও করণীয় সম্পর্কে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে সামাধান জানতে চান ইউএনও।
সভায় উপস্থিত এক জনপ্রতিনিধি জানান, সীমান্তে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে ৩০০ পরিবারকে সরিয়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে প্রশাসন। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া-সংলগ্ন তুমব্রু, ঘুমধুম, হেডম্যানপাড়া, ফাত্রা ঝিড়ি, রেজু আমতলী এলাকায় বসবাসকারী এসব পরিবারের প্রায় দেড় হাজার লোককে নিরাপদ স্থানে নেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে সভায় পর্যালোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সভায় জানানো হয় ঘুমধুম ইউনিয়নে কোনও আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় তাৎক্ষণিক এই পরিবারগুলোকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি কঠিন হয়ে যাবে। এ ছাড়া স্কুলগুলোতেও থাকার কোনও পরিবেশ নেই।
একপর্যায়ে কোনও সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা চূড়ান্ত মতামত দিলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই চলছে নতুন করে, যা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত এলাকার জন্য এক অশনিসংকেত। এসব সংঘাতের ফলে মিয়ানমারের ছোড়া গোলা এসে পড়ছে বাংলাদেশ সীমান্তে। এ নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দাদের মনে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনপ্রতিনিধিদের করণীয় শীর্ষক ওই জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেল বিস্ফোরণে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত মো. ইকবাল (১৭) নামে এক রোহিঙ্গা নিহত হন। আহত হয়েছেন পাঁচ জন। একই দিন দুপুরে সীমান্ত এলাকা থেকে গরু আনতে গিয়ে মাইন বিস্ফোরণে উইনু থোয়াইং তঞ্চঙ্গ্যা নামে একজনের পায়ের নিম্নাংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের বাংলাদেশ অভ্যন্তরে মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি বুলেট এসে পড়ে। ৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া দুটি গোলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকায় পড়ে। তারও আগে ২৮ আগস্ট বিকাল ৩টার দিকে মিয়ানমার থেকে নিক্ষেপ করা একটি মর্টারশেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় ঘুমধুমের তুমব্রু উত্তর মসজিদের কাছে পড়ে।
বারবার এভাবে গোলা পড়া ও হতাহত হওয়ার ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায়। মর্টারশেল ছোড়ার ঘটনায় সীমান্ত এলাকার অনেকে বাড়িঘর ছাড়লেও আজ থেকে ফের নিজ ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। এসব ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাট্রিবিউন