পেশায় সরকারী স্কুল শিক্ষক: ক্লাসে নয়, রাজনীতির মাঠেই বেশী বিচরণ

টেকনাফ

বার্তা বাজার

সরকারী কর্মচারী বিধিমালা লঙ্ঘন করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠন টেকনাফ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের দায়িত্বে রয়েছেন টেকনাফ বার্মিজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল হক। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উপর হামলার দ্বায়ে তার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সরকারী কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা লঙ্ঘন ১৯৭৯-এর ২৩ ধারায় বলা আছে, সরকারি কর্মচারী নিজ নামে প্রকাশিত কোনো লেখায় বা তার কর্তৃক জনসমক্ষে প্রদত্ত বক্তব্যের অথবা বেতার-টেলিভিশনে সম্প্রচারে কোনো বক্তব্য এমন কোনো বিবৃতি বা মতামত প্রকাশ করতে পারবেন না, যা সরকারকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলতে পারে।

এর ২৫ ধারায় বলা আছে, কোনো সরকারী কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোনো অঙ্গসংগঠনের সদস্য হতে বা কোনোভাবে যুক্ত হতে পারবেন না অথবা বাংলাদেশ বা অন্য দেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বা কোনো প্রকারেই সহযোগিতা করতে পারবেন না।

এসব আইনের তোয়াক্কা না করে দ্বীর্ঘ ৭ বছর তিনি সরকারী বেতন-ভাতা সহ সমস্ত সুযোগ সুবিধা ভোগ করে পেশাদারিত্ব আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে রাজনীতির মাঠে পুরুদমে সরব অংশ গ্রহনের প্রমান এসেছে ‘বার্তা বাজার’ এর হাতে। স্কুল বন্ধ বা ছুটি নেওয়ার ধারধারতেন না তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, ছাত্র জীবনে আব্দুল হক ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। পরে কলেজ কমিটির সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরাজিত হয়ে ছাত্র রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে একটি বেসরকারী স্কুলের শিক্ষকতায় যোগদেন। সেখান থেকে ২০১৭ সালে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে যুগ্ন আহবায়ক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে স্থানীয় এমপির বদান্যতায় প্রথমিক সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান।

স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ২০১৭ সাল থেকে যুগ্ন আহবাক হিসেবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপজেলা কমিটির দায়িত্ব পালনের পর ২০২২ সালে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্কুলের শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি দলীয় প্রত্যেকটা সভা-সমাবেশ, মিছিল, মিটিংয়ে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। দলীয় কর্মসূচীর দিন ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অংশগ্রহন করতেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস করতেন না।

আরও পড়ুন!  সাবেক হুইপ কমলসহ ৩২ জনের নামে আরও এক মামলা

বিগত সময়ে তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জন্য তথ্য অনুসন্ধানের কারনে দলবল নিয়ে বাস স্টেশন এলাকায় সাংবাদিক কার্যালয়ে হামলার চেষ্টা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয় সংবাদিকরা।

গত ৫ আগষ্ট সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সশস্ত্র হামলাকারীদের সাথে তাকে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। একই অভিযোগ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের।

এসব অপকর্মের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে এখনো রাজনীতিতে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করে বিস্তারিত সাক্ষাতে কথা বলবেন জানিয়ে ফোনের সংযোগ কেটেদেন।

বিষয়টি জানতে টেকনাফ বার্মিজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিব উল্লাহর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নাই। তবে দুজনই একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় হাবিব উল্লাহ সব সময় তার এসব বিষয় এড়িয়েযেতেন বলে জানিয়েছেন তার কয়েকজন ঘনিষ্ট শিক্ষক।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু নোমান আব্দুল্লাহ জানান, বিষয়টি অবগত হয়েছি। খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।

এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের দায়িত্বশীল একজন জানান, তার উপর সাবেক এমপি ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতির আশির্বাদ থাকায় শিক্ষা কর্মকর্তার উপর কৌশলে প্রভাব বিস্তার করতেন।

কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আজম বলেন- তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ গুলো সরকারী কর্মচারি বিধি মোতাবেক শাস্তি যোগ্য অপরাধ। এসব অপরাধ প্রমানিত হনে চাকুরীচ্যুত করার বিধান রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হবে। অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *