সীমান্তবাসীর বুকে কাঁপন
|| আজকের পত্রিকা ||
সীমান্তের ওপারে একটু পরপরই দ্রুম দ্রুম শব্দ। হতে পারে বোমা, মর্টার শেল, মাইন। বোঝার তো উপায় নেই। কিন্তু বিকট আওয়াজে এপারে কেঁপে কেঁপে উঠছে বাড়িঘর। কাঁপন ধরছে সীমান্তবাসীর বুকে। শুধু ওপারের শব্দও তো নয়, এপারেও এসে পড়ছে দু-চারটা। কয়েক দিন আগে তো একজন মারা গেল মর্টার শেল পড়ে, আহত হলো কয়েকজন।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমানা রয়েছে ১৫ কিলোমিটারের মতো। ঘুমধুমের তুমব্রু ক্যাম্পপাড়ার বাসিন্দা আফসার উদ্দিন রুবেল কে বলেন, ‘রোববার রাতে চার-পাঁচটি মর্টার শেল বিস্ফোরণের আওয়াজ পেয়েছি। রাত ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে এসব বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায়। এরপর সোমবার সকাল ৭টার দিকে আরও একটি মর্টার শেল বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কখনো ভারী আওয়াজ শুনতে পাই, আবার কখনো বিস্ফোরণে আওয়াজ কম থাকে। মর্টার শেল বিস্ফোরণের আওয়াজ বিকট শব্দে হয়। তখন আমাদের ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠে।’
বিজিবিও সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে। তল্লাশি ছাড়া কাউকে সীমান্ত এলাকা থেকে আসা-যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না। স্থানীয় লোকজন পরিচয় দিয়ে সীমান্ত এলাকায় যাতায়াত করতে পারলেও সাংবাদিকদের কোনোভাবে সীমান্তবর্তী এলাকায় যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
দুপুরে তুমব্রু পশ্চিমকুল গ্রামে বিজিবির তল্লাশিচৌকিতে যাওয়ার পর সেখান থেকে সাংবাদিকদের আর ভেতরে যেতে দেওয়া হয়নি। বেলা ১টার দিকে সেখানে যাওয়ার পর দেখা যায়, বিজিবি সদস্যরা ওই পথ দিয়ে যাওয়া-আসা সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটর সাইকেল যাত্রীদের তল্লাশি করছেন। এরপর তাঁদের আসা-যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন। তবে সাংবাদিক পরিচয় পেলে কাউকে ওই তল্লাশিচৌকি থেকে সীমান্তের দিকে যেতে দিচ্ছেন না।
চৌকিতে কর্মরত বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার আব্দুর রহমান বলেন, ‘দয়া করে আপনারা ওই দিকে যাবেন না। আপনারা নিউজ কভার করতে আসছেন ঠিক আছে, এ দিকে থেকে নিউজ সংগ্রহ করুন। আমরা আপনাদের সীমান্তে যেতে দিতে পারছি না। দয়া করে আমাদের কাজ করতে দিন।’ গোলাগুলি বিষয়ে জানতে চাইলে কমান্ডার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখলেন প্রশাসনের কর্তারা
সীমান্তবর্তী এলাকা পরিদর্শন করেছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি ও পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলামসহ প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে গতকাল বেলা ১টার দিকে তাঁরা ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখেন। সেখানে সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে ঘুমধুম ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী কুতুপালং উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে যান জেলা প্রশাসক। গোলাগুলির কারণে এর আগে ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রটি সেখানে সরিয়ে নেওয়া হয়। সীমান্তবর্তী এলাকার পরীক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিতে তিনি ওই পরীক্ষাকেন্দ্রে যান। পরে কুতুপাং উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে তাঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক তিবরীজি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এটাকে এক দিনে সমাধান করা সম্ভব নয়। এ জন্য আমরা সার্বিক বিষয় নিয়ে কাজ করছি। এটি এমন নয় যে বলামাত্র সমাধান হয়ে যাবে।’
সীমান্তে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে চায় প্রশাসন
পরে সেখান থেকে জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার তুমব্রু সীমান্তে পরিদর্শনে যান। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখেন। পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, ‘সীমান্তে গোলাগুলি, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় এখানে বসবাসরতদের আমরা সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছি। যাঁরা সীমান্তের বেশি কাছাকাছি অবস্থানে বসবাস করছেন, তাঁদেরকে আগে সরিয়ে নেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি দেখে অন্যদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।’
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হলেও তুমব্রু সীমান্তবর্তী একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বললে তাঁরা তাঁদের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে রাজি নন বলে জানিয়েছেন।
তুমব্রু পশ্চিমকুল ঘোনারপাড়া এলাকার রশিদ আহমেদের ছেলে মো. আনোয়ারুল ইসলাম কে বলেন, ‘আমরা কীভাবে ঘরবাড়ি ছেড়ে যাব? এখানে আমাদের অনেক জিনিসপত্র আছে। আমরা চলে গেলে এগুলোর নিরাপত্তা দেবে কে? আমাদের গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি আছে। ওই গুলো আমরা কই রাখব? তাই আমরা বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়ার পক্ষে না।’