সমকাল
দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ ওঠা প্রশাসন ক্যাডারের ৪৯ কর্মকর্তার তালিকা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ফাইল ঠেকিয়ে গ্রাহককে জিম্মি করে ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কেউ বাজারমূল্যের চেয়ে পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেশি উল্লেখ করে কেনাকাটায় সরকারি অর্থ হাতিয়েছেন। আবার কেউ প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি করে মোটা অঙ্কের টাকা পকেটে ভরেছেন। দুদক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ৪৯ কর্মকর্তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য খতিয়ে দেখছে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করেছেন। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা প্রশাসন ক্যাডারের ৪৯ কর্মকর্তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের খোঁজ নিয়ে তাদের নামে-বেনামে অস্বাভাবিক সম্পদ পেয়েছে, যা তাদের বৈধ আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।
তালিকায় থাকা কর্মকর্তারা হলেন– চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার সাবেক ইউএনও মিজানুর রহমান (বর্তমান প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে কর্মরত), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোত্তাকাব্বের, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর পিএস সানোয়ার হোসেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মশিউর রহমান, বগুড়ার সাবেক ডিসি সাইফুল ইসলাম, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব জিয়াউল হক, পাবনা ও নারায়ণগঞ্জের সাবেক ডিসি মো. জসীমউদ্দিন, কুমিল্লার সাবেক ডিসি মুশফিকুর রহমান, দিনাজপুরের সাবেক ডিসি আবুল ফাতেহ মো. শফিকুল ইসলাম।
মুন্সীগঞ্জ ও খুলনার সাবেক ডিসি মনিরুজ্জমান তালুকদার, কক্সবাজারের সাবেক ডিসি শাহীন ইমরান, খুলনার সাবেক ডিসি ইয়াছির আরেফিন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সেলিনা পারভেজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক ডিসি হায়াতউদ্দৌল্লা খান (বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি শাখার পরিচালক), বাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক ডিসি শাহগীর আলম, চট্টগ্রামের এডিসি (এলএ) রাকিবুল হাসান, দিনাজপুরের সাবেক ডিসি মাহমুদুল আলম, ঠাকুরগাঁওয়ের সাবেক ডিসি ডা. কামরুজ্জামান সেলিম, গাজীপুরের শ্রীপুরের সাবেক এসিল্যান্ড উজ্জল কুমার হালদার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব আবুল ফজলমীর।
টাঙ্গাইলের সাবেক ডিসি জমীম উদ্দিন হায়দার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (পুলিশ) ধনঞ্জয় কুমার দাস, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এপিএস-১ কাজী নিশাত রসুল, ঢাকার সাবেক ডিসি শহীদুল ইসলাম, চট্টগ্রামের সাবেক ডিসি ইলিয়াস হোসেন।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাবেক ডিসি মমিনুর রহমান, যশোরের সাবেক ডিসি তমিজুল ইসলাম খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের পিএস রেজাউল ইসলাম, কক্সবাজারের সাবেক ডিসি কামাল হোসেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের যুগ্ম সচিব গুলশান আরা, কুমিল্লা ও কুষ্টিয়ার সাবেক ডিসি শামীমুর রহমান, রাজশাহীর সাবেক ডিসি আব্দুল জলিল, পাবনার ডিসি মো. আসাদুজ্জামান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মঞ্জুরুল হাফিজ, নেত্রকোনার সাবেক ডিসি আব্দুর রহমান (বর্তমানে যুগ্মসচিব), ময়মনসিংহের সাবেক ডিসি মিজানুর রহমান (বর্তমানে যুগ্মসচিব), কুমিল্লার সাবেক এলএও মশিউর রহমান, ঢাকার সাবেক এলএও আব্দুল কাদের, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্মসচিব জাহির হোসেন, গাজীপুরের সাবেক এডিসি মাহমুদ হাসান, কক্সবাজারের সাবেক ডিসি মামুনুর রশীদ, ফরিদপুরের সাবেক ডিসি অতুল চন্দ্র বিশ্বাস, নরসিংদীর সাবেক ডিসি সৈয়দ ফারহানা কাউনাইন, যুগ্মসচিব (বিদ্যুৎ) নুরুল ইসলাম, চট্টগ্রামের ডিসি মো. বাদল, চট্টগ্রামের সাবেক এডিএম বদিউল আলম পাভেল, নরসিংদীর ডিসি শহিদুল ইসলাম।
জানা গেছে, সম্পদ অনুসন্ধান করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে ওই গোয়েন্দা সংস্থা থেকে কর্মকর্তাদের তালিকাটি দুদকে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুদক তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, অর্থ পাচার ও বিদেশে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রকাশে অনুসন্ধান করবে।