রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ধরন বদলেছে

উখিয়া কক্সবাজার

নিউজ কক্সবাজার ডেস্ক

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের ধরন এখন বদলেছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা আশ্রয়হীন অবস্থায় এসে শরণার্থী শিবিরের পুনর্বাসনকেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিল।

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের ধরন এখন বদলেছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা আশ্রয়হীন অবস্থায় এসে শরণার্থী শিবিরের পুনর্বাসনকেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিল। এখন তাদের আশ্রয় দিচ্ছে প্রভাবশালীরা। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পর প্রভাবশালীরা তাদের লোকজন দিয়ে রোহিঙ্গাদের দেখভাল করছে। মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসা কিয়েট মুদ্রা হুন্ডি ব্যবসায়ীদের দিয়ে বাংলাদেশি টাকা করে ভাড়া বাসায় উঠছে তারা। এ প্রবণতাকে বড় ধরনের অশনিসংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে টেকনাফ সীমান্তে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর দুটি অহস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, যেসব রোহিঙ্গা রাতের আঁধারে ঢুকে পড়ছে, তাদের অনেকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘যৌথ বাহিনী যেহেতু অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে, তাই রোহিঙ্গা-সংক্রন্ত এই বিশেষ পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে টেকনাফে সেনাবাহিনী-নৌবাহিনীর দুটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করা যায়।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, টেকনাফ সীমান্তে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির অবৈধ চোরাচালান ব্যবসা রয়েছে। এখন মিয়ানমারের যারা পালিয়ে আসছে, আগে থেকে পরিচিত ব্যবসায়ীরাই তাদের আশ্রয় দিচ্ছে। তারা সরাসরি কাজ না করলেও, তাদের লোকজনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের চট্রগ্রাম-কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় থাকার সুযোগ করে দিচ্ছেন।

টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, সাত বছর আগে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করে সরাসরি ক্যাম্পে চলে গেলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। আগে থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে টেকনাফের যেসব চোরাকারবারির যোগাযোগ রয়েছে, তারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে। তাদের (রোহিঙ্গাদের) চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ছত্রছায়ায় রাখছে। তাই সীমান্তে রোহিঙ্গা প্রতিরোধের পাশাপাশি আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় প্রভাবশালীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় রোহিঙ্গা ঠেকানো সম্ভব হবে না।

আরও পড়ুন!  বাংলাদেশে ঢুকেছে ১০ হাজার রোহিঙ্গা

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেকনাফ পৌরসভা, সাবরাং, সদর ও হ্নীলা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় শত শত রোহিঙ্গা বাস করছে। এবার যেসব রোহিঙ্গ ঢুকছে, তাদের একটি বড় অংশ রাখাইনের মংডু শহরের সচ্ছল পরিবারের লোকজন। দালালের পাশাপাশি স্থানীয় প্রভাবশালীরা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাদের আশ্রয় দিচ্ছে।

পৌরসভার বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিন বলেন, টেকনাফে যেসব প্রভাবশালীর ভাড়া বাসা রয়েছে, তাদের অধিকাংশ ভবনে রোহিঙ্গাদের অবস্থান রয়েছে। অনেকে সে দেশের চোরাকারবারি পার্টনারদের জায়গা দিয়েছেন। আবার অনেকে তাদের চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বাসায় আশ্রয় দিয়েছেন। টেকনাফে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করলে সবার ঘরে রোহিঙ্গা মিলবে।

হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম সিকদার পাড়া, মন্ডেল পাড়া, পশ্চিম সিকদার পাড়া, রাজাগুনা, পূর্ব সিকদার পাড়া, মগ পাড়া, উত্তর বিল ও পুরান পাড়ার স্থানীয়দের ঘরবাড়িসহ ভাড়া বাসায় উঠেছে রোহিঙ্গারা। স্থানীয় আমান উল্লাহর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের এপারে আসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন আমান উল্লাহ। তিনি বলেন, আমি কোনো সময় রোহিঙ্গাদের বাসা ভাড়া দিইনি। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় অনেক রোহিঙ্গা ঢুকে বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে বলে শুনেছি।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমাদের এলাকার প্রভাবশালীরা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রশ্রয় দিয়েছেন। মূলত পুলিশের তৎপরতা না থাকায় তারা এ সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে মিয়ানমারে থাকা বাকি রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশে ঢুকে পড়বে।’  

অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি অবগত নন বলে জানিয়েছেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন।

 

Spread the love